জীবনভগ্নাংশ-৪

‘মাঠের মাথায়’ না মাঠের কোণায়। এটা নিয়েই শুরু বচসা। রিক্সাওয়ালাকে বলেছিলাম ইকবাল রোড মাঠের মাথায় যাব। যথাস্থানে নামিয়ে দিয়ে ১০টাকা বেশী দাবী করলো।
১০টাকা বেশী কেন?
আপনি আমারে মাঠের কোণায় নিয়া আইছেন
হাসবো না কাঁদবো! ‘মাঠের মাথায় বা কোণায়’ নিয়ে বেশি চিন্তায় গেলাম না। দশটাকা বেশী দিতেই পারি বা নাও পারি। তবে তাজমহল রোডের তীব্র জ্যামে প্রায় আধাঘন্টা দু’জনেই আটকা ছিলাম। শুধু কি জ্যাম! রিক্সার চাকা শুধু প্যাডেল মারলেই ঘুরে না। প্রাইভেট কার, ঠেলা, ট্রাকের ড্রাইভারদের সাথে অশ্লীল বাক্যালাপেরও প্রয়োজন হয়। ফলে তো রিক্সাওয়ালার মেজাজ খারাপ হতেই পারে। আজকাল মেজাজ খারাপের একটা ভদ্র ইংরেজি ভাব আছে-মুড সুইং। দশটাকা রক্ষায় মুড সুইং করে কবি হেলাল হাফিজ হয়ে -’আমিও গ্রামের পোলা চুত…… গাইল দিতে জানি’র পথে হাঁটতে পারতাম। গেলাম না। খেসারত ১০ টাকা।

আজকাল মুড সুইং শব্দটাও বহুল ব্যবহৃত হয়ে উঠছে। এটা একধরণের মানসিক অবস্থার প্রকাশ। সাধারণত হরমোন জনিত কারণে এ’টা প্রভাব বিস্তার করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আমি বিশ্লেষণে যেতে চাই না। সে যোগ্যতা নেই আমার। তবে মিডিয়ার প্রভাবে সুইং করে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের দলে নাম লিখাতে পারলে ভিন্ন কথা। ইদানিং অনেকেই মুড সুইং এর শিকার হচ্ছে। অনেকের মাঝে স্বাভাবিক ভাবে এর প্রভাব দেখা যায়। দেখা দিচ্ছে এবং দেখা দেবেই। মুড সুইং এর প্রভাব আমাদের মাঝে বেড়েই যাচ্ছে। যেতে বাধ্য।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, পরিবেশের বিরূপতা, আশা-নিরাশা, পাওয়া না পাওয়া, ভালবাসায় প্রতারিত হওয়া সব কিছু আমাদের দেহ-মনকে বেশ ভালভাবে প্রভাবিত করছে। ফলে আমাদের মাঝে মুড সুইং এর গতি উর্ধ্বমুখী। কিন্তু এ’টা বাংলাদেশে। সব কিছুরই অপব্যবহার নিশ্চিত। মুড সুইং অপব্যবহার হবে, এ’টা আবার বিচিত্র কি! আজকাল অনেকেই বিভিন্নভাবে নিজেকে আড়াল করার জন্য এই শব্দ ব্যবহার করছে।
-দোস্ত কি খবর?
-আর বলিস না দোস, অফিস থেকে ফিরতে ফিরতেই মেজাজ নষ্ট (মুড সুইং) হয়ে গেল। তারপর এটা ওটা করতে করতে জান শেষ। তোর কথা মনেই ছিল না।

তাকে কি আর কিছু বলা যায়। সবকিছু মেনে নিয়ে নিজের মুডের গাছের শিকড় কাটতে থাকি। বন্ধুত্ব আর ভালবাসার পিপাসায় যেন মুড সুইং এর গাছ না জন্মায়। অপেক্ষায় থাকি কখন বাজবে সেই ঘন্টা (ফোনের রিং)। মাঠের কোণা দিয়ে শুরু করছিলাম, সুইং করে এসে থামলাম জীবনের পিচ্ছিল মাঠে। এভাবেই সুইং করতে করতে কোন একদিন এই ভাষ্কর্য্যের মত হয়ে যাব। শুকনো পাতার মালা জড়িয়ে, পাথর চোখে চেয়ে থাকবো।
কিশোরের সেই গান – আমি পাথর চোখের দৃষ্টি দিয়ে দেখবো তোমায় বিভোর ভাবে…….

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top